নিজস্ব প্রতিবেদক
নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী এলাকা সোনারগাঁওয়ে ডেন্টাল চিকিৎসার নামে চলছে ভয়ংকর এক প্রতারণা ও জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি। বিভিন্ন বাজার ও মোড়ে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ডেন্টাল ক্লিনিক, যেগুলোর অধিকাংশেই নেই কোনো রেজিস্টার্ড ডাক্তার, সরকারি অনুমোদন, কিংবা স্বাস্থ্যবিধি মানার ন্যূনতম ব্যবস্থা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এসব ক্লিনিকের মালিকরা কেউই বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (BMDC)-এর নিবন্ধিত ডাক্তার নন। অথচ তারা নিজেদের “ডা.” লিখে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রেখেছেন এবং অবলীলায় দাঁত তোলা, ফিলিং, ব্রেস বসানোসহ নানা জটিল চিকিৎসা দিচ্ছেন রোগীদের।
সাধারণ মানুষ প্রতারিত হচ্ছে
দাঁতের সমস্যায় ভুগে আসা বহু রোগী এসব নামসর্বস্ব ক্লিনিকের ফাঁদে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সোনারগাঁও বাজারের এক ভুক্তভোগী বলেন,
আমি দাঁতে ব্যথা নিয়ে পাশের এক ক্লিনিকে যাই। এক তরুণ দাঁত তুললো। কয়েকদিন পর জায়গাটা ফুলে যায়, এখন মুখের একপাশে পুঁজ জমেছে। পরে জানতে পারি লোকটা ডাক্তারই না!”
নামবিহীন ক্লিনিকের ছড়াছড়ি, খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সোনারগাঁওয়ের মোগরাপাড়া, কাঁচপুর, বারদী ও মেঘনাসহ আশেপাশের গ্রামগঞ্জের হাট বাজারে অন্তত ২০টির বেশি ডেন্টাল ক্লিনিক ডাক্তারবিহীনভাবে চলছে। কিছু ক্লিনিকের সাইনবোর্ডে ভুয়া ডাক্তারদের নাম ও ছবি ব্যবহার করা হয়েছে, আবার কিছুতে কোনো নামই নেই—শুধু লেখা “ডেন্টাল কেয়ার” বা “স্মাইল ক্লিনিক”।
স্বাস্থ্য বিভাগের উদাসীনত, স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের দাবি, নিয়মিত অভিযান চালানো হয়, কিন্তু বেশিরভাগ ক্লিনিক বন্ধ রাখে “চলতি অবস্থায় ধরা না পড়ার” কৌশল। এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,
আমরা কয়েকবার অভিযান চালিয়েছি, কিন্তু প্রশাসনিক সীমাবদ্ধতার কারণে স্থায়ীভাবে বন্ধ করা যায়নি। অনেকেই আবার অন্য নামে পুনরায় চালু করে।”
বিশেষজ্ঞদের সতর্কতা
দাঁতের চিকিৎসা জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ঢাকা ডেন্টাল কলেজের সাবেক অধ্যাপক ডা. মাহবুব আলম বলেন,
ডাক্তারবিহীন দাঁতের চিকিৎসা মারাত্মক বিপজ্জনক। ভুল চিকিৎসায় মুখের হাড়, স্নায়ু ও এমনকি হার্টেও সংক্রমণ ছড়াতে পারে।”
স্থানীয়দের দাবি—অভিযান ও আইনি ব্যবস্থা
এলাকার সচেতন নাগরিক ও সামাজিক সংগঠনগুলো প্রশাসনের কাছে দ্রুত অভিযান ও আইনগত পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছে। তারা বলছেন, “সোনারগাঁওয়ের মানুষ যেন আর প্রতারিত না হয়, তা নিশ্চিত করতে এসব ভুয়া ক্লিনিক অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।”